স্বদেশ ডেস্ক: সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। তবে এ পর্যন্ত দেশে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। শিগগিরই নতুন করে কোনো গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনাও নেই। ফলে সংকট সমাধানে আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে গড়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানিকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। শিগগিরই এলএনজি আমদনির পরিমাণ আরও বাড়ানো হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়া এবং পুরনো গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় গ্যাসের সংকট বাড়ছে। এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্পায়নের প্রয়োজনে দেশে গ্যাসের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এ আমদানির পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বাড়াতে চায় সরকার। সেটি প্রায় পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আমরা তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির
লক্ষ্যে কাজ করছি। দেশের গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানির বিকল্প আপাতত নেই। ফলে শিল্পায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার এলএনজি আমদানিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভবিষতে এ পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিল্ড ওউন ওপারেট ট্রান্সফার (বিওওটি) ভিত্তিতে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির নির্মাণাধীন ভাসমান টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি কোম্পানি সামিট এলএনজি টার্মিনাল প্রাইভেট লিমিটেড মহেশখালীতে আরও একটি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি সরবরাহ শুরু করেছে। অর্থাৎ এ দুটি টার্মিনাল থেকে এখন গড়ে প্রতিদিন ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে সক্ষমতার সবটুকু এলএনজি সরবাহ করা যাচ্ছে না। তাই এ দুর্বলতা কাটাতে পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
সূত্রটি আরও জানায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কিছু গ্যাস ফিল্ডে উত্তোলন হ্রাস পাবে। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনার সুযোগ খুঁজলেও সেটি খুব সহজে হচ্ছে না। ফলে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিওওবি ভিত্তিতে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির প্রস্তাবের একটি ছোট তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় ও আমদানির জন্য ১৭টি কোম্পানির আরেকটি তালিকা করেছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি আরপিজিসিএল। জ্বালানি বিভাগ সেই তালিকা অনুমোদনের জন্য ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে আরপিজিসিএলের এমডি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি ছোট তালিকা তৈরি করেছি। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে এখন নির্ভর করতে হবে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর।
এদিকে আরপিজিসিএল সূত্রে জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে যেসব কোম্পানির তালিকা করা হয়েছে তা ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির যে কোনো সভায় অনুমোদন হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এলএনজিবাহী ৫০টি বিদেশি জাহাজ এসেছে বাংলাদেশে। যেসব জাহাজ থেকে এলএনজি ইতিমধ্যে গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে আবিষ্কৃৃত ২৭টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে বর্তমানে ২০টি থেকে প্রতিদিন ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। যার মধ্যে দুটি বিদেশি কোম্পানির দায়িত্বে থাকা চারটি ক্ষেত্র থেকে কমবেশি ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়। তিনটি দেশি কোম্পানির আয়ত্তে থাকা ক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা হয়, বাকি এক হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে চাহিদা পূরণে সরকার গত বছরের ১৮ আগস্ট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে।